সমসাময়িক কলাম
রাজনীতির লীলাখেলা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ অক্টোবর ২০১৫, ৬:২৮ অপরাহ্ণ
তমাল ফেরদৌস ::
চল্লিশ দিন না পেরুতেই দেখা গেলো রাজনীতির লীলাখেলা। অনেক মন্ত্রী ও শুভাকাঙ্খীর দেখা মিললো না তাই প্রয়াত সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসীন আলীর চেহলামে। মন্ত্রী নাই তাই যেনো মাঠ ফাঁকা। এই কাজ সেই কাজ, ঘনিষ্টতা, অয়েলিং ও তোষামোদীর জন্য মহসীন আলী সরব নেই আজ ধরাধামে। তাই স্বার্থসিদ্ধি নেই। মন্ত্রীর চেহলাম ঘুরে অনেক পরিচিত চেহারারও দেখা মেলেনি আজ। সবাই উধাও। কারণ তার বক্তব্যকে অতিরঞ্জিত করে প্রকাশ করার সুযোগ আর নেই। তার চলে যাওয়ার সাথে সাথে এরাও এখন গাট্টিবুছকা বান্দিয়া উধাও অই গেছে। আর যারা তার সাথে আগেও ছিলেন এখনও আছেন তাদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
তবে তার চেহলামে উপস্থিত ছিলো সাধারণ চেহারাগুলো। যারা মন্ত্রীর জীবিত সহচর ছিলো এবং তার অনুপস্থিতিতেও সহচর। পেট ভরে খেয়েছে, এদিক ওদিক ঘোরাঘোরি করেছে। যেনো জীবিত মন্ত্রীকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। নির্বাক হয়ে অনেকে চেয়েও থেকেছে খু…ব।
আবার কেউ কেউতো মন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের অয়েলিং এ ব্যস্ত ছিলেন। পাছে যদি আবার মন্ত্রীর পরিবারের কেউ এমপির টিকেট পায়। এদের মধ্যে আবার কেউ কেউ ইতিমধ্যে নীতি বিসর্জন দিয়ে অন্যজনের সাথে ধান্ধা করছে। খোলস বদলিয়ে দিক বদলিয়েছে।
এখন রাজনীতি অনেকটা ধান্ধাই হয়ে গেছে। কেউ পরিবারের খরচ যোগাতে ধান্ধা করে, কেউ সমাজে পরিচিতি পেতে ধান্ধা করে, কেউ নিজেকে উচ্চ মর্যাদায় নিতে (তার ভাষায়) ধান্ধা করে। এই ধান্ধার কারণেই আজ আমরা ধান্ধাবাজ হয়ে গেছি। আমরা রাজনীতির খেলা খেলি জীবিতের বেলায় এক নাটাইয়ে। আবার মারা গেলে অন্য নাটাই ধরে টানাটানি শুরু করি। তবে সমাজে এদের দু-মুখো বলা হয়। তাতে কিন্তু এদের কিছু যায় আসে না। এদের আবার আমাদের সিলেটি সমাজে বলে ‘খালপরুয়া’।
আজকের এই দৃশ্যটি দেখে অনেকেই মর্মাহত হয়েছেন, হয়েছেন বিচলিত। ঘৃণা ও ক্ষোভ অনেকেই ঝেড়েছেন। এরা অবশ্য এখনকার রাজনীতিতে বড় বেমানান। রাজনীতির পাকাপোক্ত খালপরুয়ারা আবার এসব ইমোশনাল মানুষদের বলে থাকেন, ইতারে দিয়া কিচ্ছু অইতোনায়। কারণ এদের বড় গুণ হলো এরা মানুষ তাই দুঃখে কাঁদে, সুখে হাসে, বেদনায় কাতর হয়, মায়ার মানুষের অবর্তমান মেনে নিতে পারে না, মায়ার মানুষের সাথে বেঈমানী মেনে নিতে পারে না।
সাংবাদিক হিসেবে এসব দৃশ্য আমি খু…ব দেখেছি এই বয়সে। আমার গত ২০ বছরের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে দেখেছি যে যতো বেশি মিথ্যা কথা বলে ভাষণে, চলনে বলনে। সে তত বড় নেতা হয়ে যায়। আর আরেকটি কথা অনেক আগে থেকেই রাজনীতির বাতাসে উড়াউড়ি করতে শুনেছি যে, রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে কিছু নেই। আসলে ঠিকই। কারণ কে কাকে কথা দেয় আর কে কার সঙ্গ কখন ত্যাগ করে তার মোটামোটি একটা ধারণা সবখানে পাওয়া গেলেও রাজনীতির ক্ষেত্রে এই কথাটি বড় বেক্ষাপ্পা, তীক্ত ও নীরস।
আমি অনেককেই দেখেছি আজ এই গ্রুপে কাল অন্যগ্রুপে। এই প্রকৃতির লোকদের বর্তমান সমাজে আবার বড় বেশি কদর রয়েছে। কারণ তারা দ্ইুদিকেই তাল রাখে। মানে সব তরকারীতে লবণ দেয়। আর এই লবণের কারণে সব রাজনীতির কূটকৌশল রান্না মজাদার হয়ে ওঠে।
সৈয়দ মহসীন আলী পৌরসভার চেয়ারম্যান পদে থাকতে যাদের দেখেছি তার সাথে দহরম মহরম। তার সাথে রাজনীতির খেলা খেলতে গ্রুপিং জিইয়েই রাখতেন। আবার এমপি হওয়ার পর তাদের অনেককেই তার সাথে দেখি নাই। দেখেছি রাজনৈতিক বিরোধী শিবিরে। আবার কুলক্ষণে আর সুলক্ষণেই বলুন যে, তিনি যখন মন্ত্রী হলেন। তখন গণেশ আবার পাল্টাতে লাগলো। পুরাতন ও নতুন মিলে আবার তার সাথে সখ্যতা বাড়াতে ঘষাঘষি শুরু হয়। এটি আবার আমাদের আজিজ ভাই (বর্তমান জেলা পরিষদ প্রশাসক) এর ক্ষেত্রেও দেখেছি। তার ভাল সময়ে অনেকেই পিছু পিছু হাঁটেন। আবার একটু খাড়া হয়েই ওইসব রাজনীতিবিদরা তাকে ছেড়ে ও গেছেন।
আজ যারা মন্ত্রীর চেহলামে অংশগ্রহণ করলেন না। তাদের জন্যও এরকম দিনগুলো অপেক্ষা করছে। কারণ ইতিহাস কোনদিন কাউকে ক্ষমা করে নি। যার যতটুকু পাওনা তা ফিরিয়ে দিয়েছে অকৃপণ হাতে। আপনারা ও অপেক্ষা করুন মশাই।
মহসীন আলী বেঁচে থাকতে অনেক সত্য কথা বলায় সমালোচিত হয়েছেন চরমভাবে। তার একটি উদাহরণ মৌলভীবাজারের হযরত সৈয়দ শাহ মোস্তফা বোগদাদী (র.) মাজারের উত্তরপাশের ঈদগাহ এর জায়গা প্রসারিত করতে তার উদ্যোগ। তিনি কিভাবে এই জমিটুকু ভরাট করেছিলেন তা অকপটে হাজার হাজার মুসল্লীদের সামনে বলেছিলেন নির্ভিক চিত্তে। তিনি সমালোচিত হয়েছিলেন আর আমরা হয়েছিলাম লাভবান। গত কোরবানী ঈদে তিনি ছিলেন না তাই বলে কি মুসল্লীরা ওই স্থানে ঈদের নামায আদায় থেকে বিরত থেকেছিলেন। না থাকেন নি।
সুসময়ে অনেকেই বন্ধু বটে হয়, অসময়ে হায় হায় কেউ কারো নয়। কবির এই চরণটি আজ সত্য হলো। আর মহসীন আলীর পরিবারের জন্য একটি বাস্তব শিক্ষা হলো। তাই হতাশার কিছু নয় দৃঢ়চিত্তে সামনে বাড়তে হবে। শুধু খালপরুয়াদের বিষয়ে খু…ব সতর্ক থাকতে হবে। পরিবারের সদস্যদের মনে রাখতে হবে সাধারণ মানুষ এখনও মহসীন আলীকে ভালবাসে। তার মানে এরা আপনাদেরও ভালবাসে। যাদের ভালবাসায় ও সমর্থনে তিনি মহসীন আলী হয়ে ওঠেছিলেন।