`সংখ্যালঘু শব্দ আমাদের অভিধান থেকে মুছে ফেলতে হবে’: মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৭:৪৫ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক::
মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন (পিপিএম-সেবা) বলেছেন, আমরা কথায় কথায় বলি ‘মাইনোরিটি গ্রুপ’ বা ‘সংখ্যালঘু’। এই শব্দগুলো সমাজে বিভেদ তৈরি করে। এগুলো আমাদের অভিধান থেকে মুছে ফেলতে হবে। বাংলাদেশে সবাই সমান। তাহলে কেন কাউকে ‘সংখ্যালঘু’ বলে আলাদা করা হবে? যারা এসব শব্দ ব্যবহার করে, তারা কখনও বাংলাদেশের ভালো চায় না। তারা সবসময় ষড়যন্ত্রের জাল বুনে চলে।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, একটি রাষ্ট্রে সব ধর্মের মানুষ থাকবে-এটাই স্বাভাবিক। মাইনোরিটি শব্দ ব্যবহার মানে আগে থেকেই কারও মনোবল দুর্বল করে দেওয়া। যারা এ ধরনের কথা বলে, তাদের থেকে দূরে থাকুন। তারা দেশ ও সমাজের মঙ্গল চায় না। তিনি বলেন, আমরা যত আধুনিক হচ্ছি, ততই হানাহানির মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন সময় দেখা যায়, পূজামন্ডপে হাত দেওয়া বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা হচ্ছে অথচ ১৫-২০ বছর আগে এমনটা ছিল না।
রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শারদীয় দূর্গোৎসব উপলক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। মৌলভীবাজার মডেল থানা পুলিশ প্রশাসন এম সাইফুর রহমান অডিটোরিয়ামে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। মতবিনিময় সভায় পুলিশ সুপার বলেন, অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে অধিক সাহসিকতার সাথে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা যাতে আনন্দঘন পরিবেশে দূর্গোৎসব পালন করতে পারেন সে ব্যাপারে বর্তমান সরকার বদ্ধ পরিকর। হিন্দু ভাইদের যাতে নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা করতে না হয় সেব্যাপারে সবধরণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তার ব্যাপারে কখনও ছাড় দেওয়া হবে না। সবাই তৎপর থাকলে দুষ্কৃতিকারীরা কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রসঙ্গ টেনে পুলিশ সুপার আরো বলেন, এখনও বাংলাদেশের কোনো পাড়া বা মহল্লার কোনো হিন্দু বা মুসলিম যদি একসাথে বসবাস করে, কোনো সমস্যা হলে তারা একে অপরের পাশে দাঁড়ায়, খাবার দেয়। ওষুধ দেয়। কখনও একজন আরেকজনকে ঘৃণা করতে দেখছেন? বিপদে-আপদে একজন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের পাশে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ গিয়ে দাঁড়াচ্ছেন। আমাদের দেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এখন মডেল। তাহলে কেন আমাদের মাঝে এসব বিভ্রান্তমূলক শব্দ বলে আমাদের বন্ধনটাকে আরও দুর্বল করে দিচ্ছে।
তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে উসকানি তৈরির আশঙ্কার কথাও উল্লেখ করে পুলিশ সুপার বলেন, এখন এ.আই দিয়ে পূজামন্ডপে হামলা বা মূর্তি ভাঙচুরের ছবি ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব। এরকম ভিডিও দেখলে আগে যাচাই-বাছাই করে নেবেন। তারা এটা নিয়ে আপনাদের ভিতেরর সম্পর্কের অবনতি ঘটাতে চায়। সামাজিক বন্ধন দূর্বল করতে চায়। এই সমস্ত ব্যক্তিরা এবার বেশি সোচ্চার থাকবে। এই সময় তারা এটা ইউজ করবে। পূজাকে কেন্দ্র করে আপনারা এটা ব্যাপক আকারে দেখতে পারবেন। তারা প্রিপারেশন নিচ্ছে। আমাদের কাছে তথ্য আছে। এরকম প্রোপাগান্ডা দেখলে আগে সত্যতা যাচাই করবেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। যারা আপনাদের উল্টো বিশ্বাস করায়, তারা আগেও শান্তি চায়নি। এখনও চায় না। ভবিষ্যতও চাইবে না।
তিনি বলেন, আমাদের মা-বোনেরা যেন নির্বিঘ্নে পূজা উদযাপন করতে পারে, সেজন্য পুলিশ সর্বদা তৎপর থাকবে। যাতে কোনো অবস্থায় তারা নিরাপত্তাহীনতায় না ভোগে। পুলিশ সুপার আরও বলেন, প্রতিটি থানার ওসিকে যুক্ত করে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খোলা হবে। যেকোনো ম্যাসেজ মুহূর্তে পুলিশ সুপারের ফোনে পৌঁছাবে। নাগরিকরা এই গ্রুপের মাধ্যমে সরাসরি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন।
মতবিনিময় সভায় সদর উপজেলার ১২ ইউনিয়ন ও পৌরসভার প্রতিটি সার্বজনীন দূর্গাপূজামন্ডপ কমিটির সভাপতিবৃন্দ তাদের মতামত ব্যক্ত করেন। মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন – বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক এমপি এম নাসের রহমান,জেলা বিএনপির আহবায়ক মো.ফয়জুল করিম ময়ূন,জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর ইঞ্জিনিয়ার শাহেদ আলী, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন ফ্রন্ট মৌলভীবাজার জেলা সভাপতি এড. সুনীল কুমার দাশ, জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মো. ইয়ামীর আলী, জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান মিজান, মাওলানা জামিল আহমেদ আনসারি, জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য স্বাগত কিশোর দাশ চৌধুরী,এনসিপির মৌলভীবাজার জেলার প্রধান সমন্বয়ক সাহেদ আলম,বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের জেলা সভাপতি আশু রঞ্জন দাশ প্রমূখ।