মৌলভীবাজার হোটেল শ্রমিকদের ঈদ বোনাস প্রদান ও সরকার ঘোষিত মজুরি বাস্তবায়নের দাবি
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ মে ২০২৫, ৯:৩৫ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক::
ঈদুল আযহায় উৎসব বোনাস ও মজুরিসহ ছুটি প্রদান, সরকার ঘোষিত নিম্নতম মজুরি বাস্তবায়ন এবং হোটেল সেক্টরে ৮ ঘন্টা কর্মদিবস, নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র প্রদানসহ শ্রমআইন বাস্তবায়ন দাবিতে মৌলভীবাজার জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন স্মারকলিপি প্রদান করেছে।
বুধবার (২৮ মে) দুপুরে মৌলভীবাজার জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি তারেশ চন্দ্র দাশ ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহিন মিয়া স্বাক্ষরিত এই স্মারকলিপি মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপমহাপরিদর্শক, বিভাগীয় শ্রমদপ্তরের উপপরিচালক বরাবর পেশ করা হয়।
স্মারকলিপির অনুলিপি শ্রমঅধিদপ্তরের মহাপরিচালক, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক হোটেল-রেস্টুরেন্ট মালিক সমিতি বরাবর পেশ করা হয়। স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয় মুসলমানদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আযহা মুসলিম সম্প্রদায়ের জনগণের কাছে আনন্দের বার্তা নিয়ে আসলেও হোটেল-রেস্টুরেন্ট-সুইটমিট শ্রমিকদের সব সময় এই আনন্দ থেকে বঞ্চিত করা হয়। কারণ ঈদুল আযহায় হোটেল-রেস্টুরেন্ট-সুইটমিট শ্রমিকরা ন্যায্য উৎসব বোনাস পান না। এমন কি অধিকাংশ হোটেল-রেস্টুরেন্ট-সুইটমিট শ্রমিকদের ঈদ উপলক্ষে ছুটি দেওয়া হলেও ছুটিকালীন সময়ের মজুরিও দেওয়া হয় না। অথচ শ্রমিকদের হাড়ভাঙ্গা খাটুনিতে সৃষ্ঠ মুনাফায় মালিকপক্ষ মহাধুমধামে ঈদ উৎসব উদযাপন করেন। অথচ বাংলাদেশ শ্রমআইন-২০০৬ (অদ্যাবধি সংশোধিত)এর ধারা ২(২ক) এবং বাংলাদেশ শ্রমবিধি-২০১৫ এর বিধি-১১১(৫) অনুযায়ী সকল শ্রমিককে উৎসব বোনান প্রদান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ ও মানবাধিকারের দিক থেকেও শ্রমিকদের উৎসব বোনাস থেকে বঞ্চিত করা অমানবিক। হোটেল-রেস্টুরেন্ট-সুইটমিট শ্রমিকরা যে মজুরি পান তা দিয়ে বর্তমান ঊর্দ্ধগতির বাজারদরে পরিবার-পরিজন নিয়ে একজন শ্রমিক ১০ দিনও চলতে পারেন না। চাল, ডাল, তেল, চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্দ্ধগতির পাশাপাশি বাড়িভাড়া, গাড়িভাড়া বৃদ্ধির কারণে জনজীবন দিশেহারা।
এমতবস্থায় গত ০৫ মে ২০২৫ হোটেল-রেস্টুরেন্ট শিল্প সেক্টরে সরকারের নি¤œতম মজুরি হার ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করেন। ঘোষিত নি¤œতম মজুরি বর্তমান বাজারদর এবং ৬ সদস্যদের একটি পরিবারের ভরণপোষণের প্রেক্ষিতে শ্রমিকদের দাবি থেকে অনেক কম। কিন্তু তারপরও সরকার ঘোষিত নি¤œতম মজুরি সর্বস্তরে কার্যকর করা হয়নি। তদুপরি হোটেল-রেস্টুরেন্ট-সুইটমিট শ্রমিকদের শ্রমআইনের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা থেকেও বঞ্চিত করা হয়। হোটেল-রেস্টুরেন্ট-সুইটমিট শ্রমিকদের চাকুরির নিশ্চয়তা ও জীবনের নিরাপত্তা নেই। বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ এর ৫ ধারায় নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র, ৬ ধারায় সার্ভিস বই, ২(১০) ধারায় চাকুরীচ্যূতি জনিত ৪ মাসের নোটিশ পে, প্রতিবছর চাকুরীর জন্য ১ মাসের গ্রাচ্যুয়েটি, ১০৩ ধারায় সপ্তাহে দেড়দিন সাপ্তাহিক ছুটি, ১০৮ ধারায় দৈনিক ৮ ঘন্টা সপ্তাহে ৪৮ ঘন্টা কাজ, অতিরিক্ত কাজের জন্য দ্বিগুণ মজুরি প্রদান, ১১৫ ধারায় বছরে ১০ দিন নৈমিত্তিক ছুটি, ১১৬ ধারায় ১৪ দিন অসুস্থাতার ছুটি, ১১৭ ধারায় প্রতি ১৮ দিন কাজের জন্য ১ দিন অর্জিত ছুটি, ১১৮ ধারায় ১১ দিন উৎসব ছুটি প্রদানের আইন থাকলেও শ্রমিকদেরকে এই সকল আইনগত অধিকার হতে বঞ্চিত করা হচ্ছে। অথচ হোটেল মালিকপক্ষ সরকারী আইনের তোয়াক্কা না করলেও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এব্যাপারে নির্বিকার। শ্রমআইনে স্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ ও বাসস্থানের বিধান থাকলেও শ্রমিকদের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করতে ও থাকতে বাধ্য করা হয়। শ্রমিকদের দৈনিক ১০/১২ ঘন্টা অমানবিক পরিশ্রম করে অর্ধাহারে-অনাহারে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হয়। যার কারণে হোটেল-রেস্টুরেন্ট-সুইটমিট শ্রমিকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। স্মারকলিপিতে হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃত্বে মুসলমানদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আযহায় উৎসব বোনাস ও মজুরিসহ ছুটি প্রদান, সরকার ঘোষিত নি¤œতম মজুরি বাস্তবায়ন এবং হোটেল সেক্টরে ৮ ঘন্টা কর্মদিবস, নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র প্রদানসহ শ্রমআইন কার্যবর করার দাবি জানান।






