আজ মহাসপ্তমী ষষ্ঠীতে শুরু দুর্গাপূজা, মণ্ডপে মণ্ডপে ত্রিনয়নী
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৭:৫৮ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক::
দেবীর বোধনের পর এবার ষষ্ঠীতে শুরু হলো বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার মূল পর্ব। গতকাল রোববার সকালে ‘দুর্গা মায়ের’ মুখ উন্মোচন করা হয়। লক্ষ্মী, গণেশ, কার্তিক, সরস্বতীকে নিয়ে স্বর্গ থেকে মর্ত্যে এসে মণ্ডপে মণ্ডপে অধিষ্ঠিত হন ত্রিনয়নী দেবী দুর্গা। এ দিন ঢাকের বাদ্য, উলুধ্বনি, শঙ্খনাদ আর কাসর ঘণ্টায় মুখরিত হয়ে ওঠে ঢাকাসহ মন্দির-মণ্ডপ। সকাল ৯টা ১০ মিনিটে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে বেলগাছের নিচে ঘট স্থাপন করে ষোড়শ উপাচারে ষষ্ঠাদি কল্পারম্ভে ষষ্ঠীপূজা শুরু হয়। এর আগে ভোর থেকে চলতে থাকে পূজার সরঞ্জামাদি সাজানোর কাজ। এরপর ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয় শারদীয় দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা, যার সমাপ্তি হবে আগামী ২ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে দেবী দুর্গার বিসর্জনের মধ্য দিয়ে। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের উপদেষ্টা পুরোহিত প্রণব চক্রবর্তী বলেন, সংকল্প ও আরম্ভ এ দুই মিলিয়ে হয় কল্পারম্ভ। এর মাধ্যমে দেবীর কাছে প্রতিজ্ঞা করা হয়, সব নিয়ম মেনেই তার পূজার্চনা করা হবে। তিনি বলেন, ষষ্ঠীর আগে দেবী দুর্গা ছোট্ট শিশু কুমারীরূপে বেলগাছের তলায় ঘুমিয়ে থাকেন। শনিবার সন্ধ্যায় বোধনের মধ্য দিয়ে দেবীর ঘুম ভাঙানো হয়েছে। আজকে (রোববার) পূজা এবং অঞ্জলির মধ্য দিয়ে আমরা দেবীর কাছে শান্তি প্রত্যাশা করেছি। সকাল সাড়ে ১০টায় অঞ্জলি দিয়ে দেবীর ভক্তরা দেশ এবং সারা বিশ্বে অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে শুভ শক্তি ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় দুর্গার চরণে গন্ধ, পুষ্প, অর্ঘ্য ও বাদ্য দিয়ে প্রার্থনা করেন ষষ্ঠী পূজায়। সন্ধ্যায় হয় দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাস। এরপর শুরু হয় দেবী দর্শন। হিন্দু আচার অনুযায়ী, মহালয়া, বোধন আর সন্ধিপূজা—এই তিন পর্ব মিলে দুর্গোৎসব। পঞ্জিকা অনুযায়ী, এবার দেবী দুর্গার আগমন হয়েছে গজে অর্থাৎ হাতির পিঠে চড়ে। দশমীতে দেবী মর্ত্যলোক ছাড়বেন দোলায় চড়ে। মহালয়ার মধ্য দিয়ে গত ২১ সেপ্টেম্বর এবারের দুর্গোৎসবের ক্ষণ গণনা শুরু হয়েছিল। ওইদিন থেকেই দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতার সূচনা হয়।
সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, দশভুজা দেবী দুর্গা অসুর বধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ধরায় আসেন। সন্তানদের নিয়ে কয়েকটি দিন পিতার গৃহে কাটিয়ে ফের ফিরে যান দেবালয়ে। মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে গতকাল থেকে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পাঁচ দিনব্যাপী কেন্দ্রীয়ভাবে শারদীয় দুর্গাপূজার আয়োজন করেছে। এ ছাড়া ঢাকায় সবচেয়ে বড় পরিসরে এবারও মহাঅষ্টমীর কুমারীপূজা অনুষ্ঠিত হবে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনে। এ দিন ফুল, জল, বেলপাতা, ধূপ-দীপসহ ষোড়শ উপাচারে কুমারীরূপে দেবী দুর্গারই আরাধনা করা হয়। রামকৃষ্ণ মিশনে বেলা ১১টায় কুমারীপূজা হওয়ার কথা রয়েছে। আজ সোমবার সপ্তমীর সকালে হবে দুর্গাদেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ, স্থাপন, সপ্তমাদি কল্পারম্ভ ও মহাসপ্তমীর বিহিত পূজা। বৃহস্পতিবার বিজয়া দশমীর দিন সকালে হবে দুর্গাদেবীর দশমী বিহিত পূজা ও পূজান্তে দর্পণ বিসর্জন। এদিন ঢাকেশ্বরী মন্দিরে দুপুর ১২টায় থাকবে স্বেচ্ছায় রক্তদান এবং বিকেল ৩টায় বের হবে বিজয়া শোভাযাত্রা। এবারের পূজায় শুধু ঢাকায় গতবারের তুলনায় ৭টি বেড়ে মোট ২৫৯টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আর সারা দেশে মোট মণ্ডপের সংখ্যা ৩৩ হাজার ৩৫৫টি, যা গতবারের তুলনায় হাজারখানেকের বেশি।