গুণী শিক্ষক সম্মাননা পেলেন মোছাম্মাৎ আমিনা বেগম
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ অক্টোবর ২০২৫, ৭:৪৫ অপরাহ্ণ
বিশেষ প্রতিনিধি :
রাজনগর উপজেলায় নারী শিক্ষার একমাত্র প্রতিষ্ঠান-মৌলানা মুফজ্জল হোসেন মহিলা ডিগ্রি কলেজের জীববিজ্ঞান বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক মোছাম্মাৎ আমিনা বেগম-বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে জেলা পর্যায়ে সাধারণ কলেজে শ্রেষ্ঠ গুণী শিক্ষক হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছেন।
গত ৫ অক্টোবর রোববার- শহরের এম সাইফুর রহমান অডিটোরিয়ামে- এ পুরস্কার প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আসমা সুলতানা নাসরীন। প্রধান অতিথি ছিলেন মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ ইসরাইল হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন- মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ মনসুর আলমগীর।অতিথিবৃন্দ অনুষ্ঠানে গুণী শিক্ষককে সম্মাননা স্মারক ক্রেস্ট প্রদান করেন।
মোছাম্মাৎ আমিনা বেগম মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মাতারকাপন গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মোঃ আব্দুল গণি এবং মাতা মরহুমা রূপবান বেগম। তিনি আলী আমজাদ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিকে প্রথম বিভাগ ও মৌলভীবাজার সরকারি মহিলা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এর ধারাবাহিকতায় তিনি মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ থেকে প্রাণিবিদ্যা বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) প্রথম শ্রেণি ও সিলেট মুরারিচাদ কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। প্রতিষ্ঠানে যোগদান পরবর্তী সময়ে তার এম.ফিল (M.Phil) গবেষণার শিরোনাম “Study the urban mosquito burden in the municipality area of Moulvibazar, Sylhet, Bangladesh” সম্পন্ন করেন। তার পিএইচডি (PhD) গবেষণার শিরোনাম “Blood Feeding Habit, Potential Parasitic Relationship and Screening of Biological Insecticidal Response to Culex Mosquitoes in Urban Areas of Moulvibazar, Sylhet” গবেষণা কার্যক্রম চলমান আছে। বাংলাদেশের স্বীকৃত জার্নাল “Bangladesh Journal of Zoology” Volume 52(3): December 2024, Zoological Society of Bangladesh, Dhaka University, তে তার লিখিত আর্টিকল “Mosquito Breeding Status in Drains in the Municipality Area of Moulvibazar, Sylhet, Bangladesh” প্রকাশিত হয়েছে। জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর কর্তৃক প্রকাশিত “নবীন বিজ্ঞানী বিজ্ঞান সাময়িকীতে “মশার প্রাদুর্ভাব রোধে করণীয়”; “বিলুপ্তপায় বন্যপ্রাণী ও তাদের সংবক্ষণ”; “ঘরে বাতাস বিশুদ্ধকারী কিছু গাছ”; “বিস্ময়কর কতিপয় বুদ্ধিমান প্রাণী” বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
তিনি কলেজে মাল্টিমিডিয়া ও আধুনিক শিক্ষা উপকরণ ব্যবহার করে শিক্ষার্থী-কেন্দ্রিক শিখন, জীবনমুখী শিখন, হাতে-কলমে শিখন, প্রজেক্ট-বেইসড লার্নিং (PBL), টিম ওয়ার্ক, রোল প্লে সহ বিভিন্ন আধুনিক শিখন কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এছাড়া ব্লেন্ডেড লার্নিং পদ্ধতি অনুসরণ করে তিনি অনলাইন ও অফলাইন উভয় মাধ্যমে পাঠদান করেন। তিনি কলেজে অনুপ্রেরণামূলক কার্যক্রম, সহপাঠ কার্যক্রম পরিচালনা (বিতর্ক, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপস্থাপনা ও অংশগ্রহণ), স্বাস্থ্য সচেতনতায় উৎসাহদান ও বিজ্ঞান অলিম্পিয়ড, বিজ্ঞান বিষয়ক প্রকল্প তৈরির পরিচালনা করে শিক্ষার্থীদের নিয়ে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে একাধিকবার ১ম স্থান এবং জাতীয় পর্যায়ে বিশেষ কৃতিত্ব অর্জন করেন যা প্রতিষ্ঠানের জন্য সুনাম বয়ে আনে। জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ, সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতাসহ কলেজ পর্যায়, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে অসংখ্যক প্রতিযোগিতায় গাইড শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করায় শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিষয়ে সফলতা লাভ করে। এছাড়া বিশ্ব সাহিত্যকেন্দ্রের বই পড়া কর্মসূচিতে সংগঠক হিসেবে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি গল্প, কবিতা, উপন্যাসসহ বাংলা সাহিত্যে চর্চায় উৎসাহিত করেন। একাডেমিক পরিবেশ সৌহার্দ্যপূর্ণ রাখার জন্য শৃঙ্খলা রক্ষা, শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধকল্পে গাইড শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সচেতন করে যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও নৈতিক শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করেন। তার সৃজনশীল বিশেষ কৃত্বিতের জন্য ২০১৯ ও ২০২২ সালে উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে নির্বাচিত হয়ে সম্মাননা স্মারক ক্রেস্ট পেয়েছেন। তাছাড়া করোনাকালীন সময়ে Zoom Apps এর মাধ্যমে ভার্চুয়াল ক্লাস, তার ইউটিউব চ্যানেলে ৪০টি অধিক ক্লাস ভিডিও আপলোড, শিক্ষক বাতায়নে ৩৯টি কন্টেন্ট, ৩৫টি ভিডিও ক্লাস আপলোড করেন। তার আপলোড করা ক্লাস করোনাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের পাঠকার্যক্রমে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এই বিশেষ অবদানের জন্য ‘দৈনিক শিক্ষার আলো ডট কম’ তাকে ‘করোনা যোদ্ধা শিক্ষক সম্মাননা প্রদান করে। তিনি DSHE পরিচালিত “Higher Secondary Education Project” মাস্টার ট্রেইনারদের “TPD Pilot Phase training (Face-to- Face and online)” সম্পন্ন করেছেন। তিনি নিজেকে সমৃদ্ধ ও যুগোপযোগী দক্ষ শিক্ষক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে অনলাইন ও অফলাইন শতাধিক প্রশিক্ষণ ও কোর্স সম্পন্ন করেছেন।
তিনি বাংলাদেশ প্রাণিবিজ্ঞান সমিতি ও বাংলাদেশ এন্টোমলজিক্যাল সোসাইটির আজীবন সদস্য হিসেবে প্রাণী বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও পরিবেশ রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। তিনি অন্বেষা নামক সামাজিক সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে অদম্য মেধাবীদের আর্থিক সহায়তা প্রদান এবং জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সম্মাননা প্রদানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তিনি ‘সুধীজন’ সংগঠনের একমাত্র মহিলা সদস্য হিসেবে শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষায় উৎসাহিত করা এবং মানবকল্যাণমূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিশেষ অবদান রাখছেন। তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দে তাঁকে মৌলভীবাজার জেলায় কলেজ পর্যায়ে গুণী শিক্ষক সম্মাননায় সম্মানিত হয়েছেন।